SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

চতুর্থ শ্রেণি (প্রাথমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

অষ্টম অধ্যায়

মুক্তিদাতা যীশু

এ পৃথিবীতে মুক্তিদাতার আগমনের উদ্দেশ্য ও তাঁর জন্ম সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি। এবার আমরা তাঁর মুক্তিকাজের বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। “ঈশ্বর জগৎকে এতই ভালোবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করে দিয়েছেন যাতে, যে কেউ তাঁকে বিশ্বাস করে, তার কারো যেন বিনাশ না হয়, বরং সে যেন লাভ করে অনন্ত জীবন। ঈশ্বর জগৎকে দণ্ডিত করতে তাঁর পুত্রকে পাঠান নি; পাঠিয়েছিলেন, যাতে তাঁর মাধ্যমে জগৎ পরিত্রাণ লাভ করে” (যোহন: ৩: ১৬-১৮)। পবিত্র বাইবেলের এই বাণীর মধ্যে আমরা সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই, যীশু জগতের মুক্তিদাতা। ত্রিশ বছর পর্যন্ত যীশু নাজারেথে তাঁর পিতামাতার সাথে জীবন কাটান। সময় পূর্ণ হলে তিনি মুক্তিদায়ী কাজের জন্য তাঁর প্রকাশ্য জীবন আরম্ভ করেন।

যীশুর মুক্তিদায়ী কাজের শুরু

বাণী প্রচার, আশ্চর্য কাজ ও জীবনাদর্শ দ্বারা যীশু মানবজাতির জন্য মুক্তিকাজ শুরু করেন। এই কাজ তিনি শুরু করেছেন গালিলেয়াতে। প্রথমে তিনি দীক্ষাগুরু যোহনের কাছে দীক্ষাস্নাত হন। এরপর তিনি মরুপ্রান্তরে চল্লিশ দিন যাবৎ উপবাস ও প্রার্থনা করে কাটান। তিনি শুনতে পেলেন, দীক্ষাগুরু যোহনকে কারাগারে বন্দী করা হয়েছে। তখন তিনি গালিলেয়া এসে ঈশ্বরের মঙ্গলসমাচার প্রচার করতে লাগলেন। তিনি বলতে শুরু করলেন, “সময় পূর্ণ হয়েছে, ঈশ্বরের রাজ্য এখন কাছে এসে গেছে। তোমরা সকলে মন পরিবর্তন কর ও মঙ্গলসমাচারে বিশ্বাস কর” (মার্ক ১:১৪-১৫)। একদিকে তিনি বাণী প্রচার করতে লাগলেন, অন্যদিকে তিনি শিষ্যদেরও আহ্বান করতে লাগলেন। একদিন তিনি তাঁর নিজের শহর নাজারেথের সমাজগৃহে গেলেন। সেখানে তিনি প্রবক্তা ইসাইয়ার বাণী গ্রন্থ থেকে পাঠ করলেন। তিনি নিম্নলিখিত অংশটি পাঠ করেন :

“প্রভুর আত্মিক প্রেরণা আমার উপর নিত্য অধিষ্ঠিত, কারণ প্রভু আমাকে অভিষিক্ত করেছেন। তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন দীন দরিদ্রের কাছে মঙ্গলবার্তা প্রচার করতে, বন্দীর কাছে মুক্তি আর অন্ধের কাছে নবদৃষ্টিলাভের কথা ঘোষণা করতে, পদদলিত মানুষকে মুক্ত করে দিতে এবং প্রভুর অনুগ্রহদানের বর্ষকাল ঘোষণা করতে” (লুক ৪:১৮- ১৯) ।

এই বাণী ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রভু যীশু সকলকে জানিয়ে দেন যে, প্রবক্তা ইসাইয়া বহুদিন আগে তাঁর সম্পর্কেই বলেছিলেন। প্রবক্তা বলেছিলেন যে, “কুমারীর গর্ভে একজন মুক্তিদাতা জন্ম নেবেন এবং বিভিন্নভাবে বন্দী মানুষকে তিনি মুক্ত করবেন।”

যীশুর মুক্তিবাণীর মর্মার্থ

এখন আমরা বুঝতে পারলাম যে, যীশুর বাণী প্রচারকাজের মূল বিষয় ছিল ঐশরাজ্য। তিনি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান যে ঐশরাজ্য কাছে এসে গেছে। অর্থাৎ ঈশ্বর সকল সৃষ্টির উপর রাজত্ব করেন। তিনি সব কিছুর প্রভু। তিনি সকল জাতির রাজা। এ সম্পর্কে তিনি সকলকে সচেতন হতে ও মন পরিবর্তন করে ঈশ্বরের পথে ফিরে আসতে বলেন। ঈশ্বরের পথে ফিরে আসার অর্থ ন্যায্যতা, শান্তি, ভালোবাসা, ক্ষমা, সহানুভূতি, দয়া, মমতা, ইত্যাদি গুণ প্রকাশ করা। মানুষ নানারকম পার্থিব চিন্তায় মগ্ন ছিল। তারা দৈহিকভাবে বন্দী না থাকলেও আধ্যাত্মিকভাবে বন্দী ছিল। অর্থাৎ ঈশ্বরের পথ থেকে সরে গিয়ে শয়তানের পথে বিচরণ করছিল। তাদের মধ্যে অন্যায়, অশান্তি, ঘৃণা, প্রতিশোধ, কঠোর মনোভাব ইত্যাদি প্রকাশ পেত। কাজেই সকলেরই শয়তানের পথ থেকে মন ফিরিয়ে ঈশ্বরের পথে আসতে হবে। ঈশ্বরকে রাজা ও প্রভু বলে নতুন করে গ্রহণ করতে হবে। যীশুর বিভিন্ন আশ্চর্য কাজ

১। একদিন যীশু একটি শহরে গেলেন। হঠাৎ একজন কুষ্ঠরোগী যীশুর সামনে এসে দাঁড়ালেন। যীশুকে দেখে সে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে এই মিনতি জানাল: “প্রভু আপনি চাইলেই আমাকে সারিয়ে তুলতে পারেন।” হাত বাড়িয়ে যীশু তাকে স্পর্শ করে বললেন: “তাই চাই আমি তুমি সেরেই ওঠো।” আর তখনোই তার কুষ্ঠরোগ দূর হয়ে গেল (লুক: ৫ :১২-১৩)।

২। যীশু লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন, এমন সময় কয়েকজন লোক একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষকে খাটিয়ায় করে বয়ে নিয়ে এলো। তারা ভিড়ের জন্য লোকটিকে বাড়ির ভিতরে আনতে পারছিল না। তাই তারা ঘরের ছাদের টালি সরিয়ে রোগীটিকে খাটিয়া সমেত লোকদের মাঝখানে যীশুর সামনে নামিয়ে দিল। তাঁর প্রতি তাদের এমন বিশ্বাস দেখে যীশু তাকে বললেন: “শোন, তোমার পাপ ক্ষমা করা হলো।” তিনি লোকটিকে আবার বললেন: “আমি তোমাকে বলছি: ওঠো, তোমার খাটিয়া তুলে নাও আর ঘরে যাও!” আর তখনই সে তাদের সামনে উঠে দাঁড়াল। যে খাটিয়ায় সে এতক্ষণ শুয়েছিল, তা তুলে নিয়ে তখন ঈশ্বরের বন্দনা করতে করতে বাড়ি ফিরে গেল। উপস্থিত সকলে তখন অবাক হয়ে গেল (মার্ক ২:১-১২)। ৩। যীশু লোকদের সাথে কথা বলছিলেন, তখন একজন ইহুদি সমাজনেতা তাঁর কাছে এসে নত হয়ে বললেন: “আমার মেয়েটি এইমাত্র মারা গেছে! আপনি এসে তার গায়ে একবার হাত রাখুন, তাহলে সে নিশ্চয়ই বেঁচে উঠবে!” যীশু তখনই তাঁর সঙ্গে চললেন। সমাজ নেতার বাড়িতে গিয়ে দেখলেন অনেক লোকের ভিড়। তিনি তখন বললেন: “তোমরা এখান থেকে চলে যাও; মেয়েটি তো মারা যায় নি। ও তো ঘুমুচ্ছে!” তারা তাঁকে নানা মন্তব্য করতে লাগল। তখন সেসব লোককে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হলো। যীশু এবার ঘরের ভেতরে গিয়ে মেয়েটির একটি হাত ধরলেন। আর সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি উঠে দাঁড়াল। এই ঘটনা চারিদিকে প্রচারিত হয়ে গেল (মার্ক ৫:৩৫-৪৩)।পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোকটিকে যীশু সারিয়ে তুলেন।

যীশু একটার পর একটা আশ্চর্য কাজ করে চলছিলেন। দীক্ষাগুরু যোহনের শিষ্যেরা যোহনকে এই সংবাদ দিলেন। তাই যোহন একদিন তাঁর দুইজন শিষ্যকে যীশুর কাছে পাঠালেন। তাঁদের তিনি এই কথা জানতে পাঠালেন যে যাঁর আসার কথা, তিনিই সেই মুক্তিদাতা কি না। ঠিক এই সময়েই যীশু যোহনের শিষ্যদের সামনে অনেকগুলো আশ্চর্য কাজ করলেন। এরপর তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা এখন যা কিছু দেখলে বা শুনলে, সবই যোহনকে গিয়ে জানাও। তাঁকে জানাও: অন্ধ এখন দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে, কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করা হচ্ছে, কালা কানে শুনতে পাচ্ছে, মরা মানুষ বেঁচে উঠছে আর দীনদরিদ্রদের কাছে মঙ্গলবার্তা প্রচার করা হচ্ছে।” এই কথাগুলো বলে যীশু যোহনের শিষ্যদের জানালেন যে, যীশুই সেই মুক্তিদাতা, মানুষ যাঁর অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি যেসব আশ্চর্য কাজ করছেন, সেগুলো ঐশরাজ্যের চিহ্ন। অর্থাৎ ঈশ্বর সবকিছুর উপর প্রভুত্ব করেন।

মুক্তির পথে চলা

আমরা ঈশ্বরের সৃষ্ট মানুষ। আমাদের জন্য তাঁর একটা সুন্দর পরিকল্পনা আছে। তিনি আমাদের মঙ্গলের জন্যই সেই পরিকল্পনা করেছেন। সেই পরিকল্পনা অনুসারেই তিনি তাঁর প্রিয় পুত্র যীশুকে পাঠিয়েছেন। প্রভু যীশু আমাদের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছেন তিনি আমাদের জন্য স্বর্গের পথ খুলে দিয়েছেন। আমরা যদি যীশুর দেখানো পথে বিশ্বস্তভাবে চলতে থাকি তবে আমরা মুক্তি লাভ করব। কীভাবে যীশুর পথে এগিয়ে চলা

যায় নিচে তার কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলো:

১। পবিত্র বাইবেলে লিখিত ঈশ্বরের সব বাণীর উপর তথা ঈশ্বরের উপর গভীর বিশ্বাস স্থাপন করা

২। মনে-প্রাণে যীশুকে মুক্তিদাতারূপে গ্রহণ করা

৩। পবিত্র আত্মার দানগুলো নিয়ে ধ্যান করা ও সেগুলো বাড়িয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করা

৪। পবিত্র আত্মার প্রেরণার উপর আস্থা রাখা ও তাঁর প্রেরণায় চলা

৫। প্রতি রবিবার এবং অন্যান্য সময়ও সুযোগ হলে খ্রিষ্টযাগে ও প্রার্থনায় যোগদান করা ৬। ঈশ্বর ও প্রতিবেশীকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা

৭। পার্থিব লোভ-লালসা পরিহার করা

৮। মাঝে মাঝে উপবাস ও দরিদ্রদের দান বা দয়ার কাজ করা

৯। নিজের স্বার্থ ত্যাগ করা ও নিজের ক্রুশ কাঁধে নিয়ে যীশুর অনুসরণ করা ১০। পাপস্বীকার ও খ্রিষ্টপ্রসাদ সাক্রামেন্ত নিয়মিত গ্রহণ করা; দেহ, মন ও আত্মায় পরিশুদ্ধ থাকা

১১। বিশ্বাস ও মনোযোগ সহকারে এবং নিরাশ না হয়ে প্রতিদিনকার প্রার্থনা করা 

১২। নিজ নিজ পাপের জন্য অনুতাপ করা ও মন ফেরানো

১৩। প্রতিবেশীর সেবা করা।

কী শিখলাম

যীশু গালিলেয়াতে তাঁর মুক্তিদায়ী কাজ শুরু করেছেন। আশ্চর্য কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর মুক্তিদায়ী কাজের প্রকাশ ঘটেছে। মুক্তির পথে চলার উপায়গুলো আমরা জেনেছি।

পরিকল্পিত কাজ

১। যীশুর পাঁচটি আশ্চর্য কাজের একটি তালিকা তৈরি কর।

২। যীশুর যে কোনো একটি আশ্চর্য কাজ অভিনয়ের মাধ্যমে দেখাও।

অনুশীলনী

১। শূন্যস্থান পূরণ কর

(ক) যীশু দীক্ষাগুরু যোহনের কাছে………………গ্রহণ করেছিলেন। 

(খ) যীশু সমাজগৃহে গিয়ে প্রবক্তা……….বাণী গ্রন্থ থেকে পাঠ করেছিলেন

(গ) যীশুর বাণী প্রচারের মূল বিষয় ছিল…………

(ঘ) ঈশ্বর তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী ........... পাঠিয়েছিলেন। 

(ঙ) মুক্তি লাভের উপায় হলো মনে-প্রাণে যীশুকে………… রূপে গ্রহণ করা।

 

৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দাও

৩.১ যে পুত্রকে বিশ্বাস করে সে

(ক) মুক্তিলাভ করে

(খ) চিরসুখী হয়

(গ) অনন্ত জীবন লাভ করে 

(ঘ) পুরস্কার লাভ করে

৩.২ ঈশ্বরের পথে ফিরে আসার অর্থ হলো

(ক) পাপ না করা

(খ) ক্ষমা করা

(গ) সুস্থতা লাভ করা

(ঘ) যীশুকে গ্রহণ করা

৩.৩ যীশু কার মেয়েকে বাঁচিয়ে তুললেন?

(ক) শতানিকের

(খ) ফরিসির

(গ) সেনাপতির

(ঘ) সমাজ নেতার

৩.৪ ঐশরাজ্যের চিহ্ন কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে? 

(ক) যোহনের বাণী প্রচারের মাধ্যমে 

(খ) যীশুর দীক্ষাস্নান গ্রহণের মাধ্যমে 

(গ) যীশুর আশ্চর্য কাজের দ্বারা 

(ঘ) যীশুর বাণী প্রচারের মাধ্যমে। 

৩.৫ যীশু তাঁর প্রচারকাজ শুরু করেছিলেন -

(ক) নাজারেথে

(খ) কাফারনাহূমে

(গ) গালিলেয়ায়

(ঘ) যেরুসালেমে

৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

(ক) যীশু কুষ্ঠরোগীকে কী বলে সুস্থ করেছিলেন?

(খ) যীশু কেন জীবন দিয়েছিলেন?

(গ) যোহনের শিষ্যরা কেন যীশুর কাছে গিয়েছিলেন? 

(ঘ) আমরা কীভাবে মুক্তিলাভ করতে পারি?

৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

(ক) নাজারেথের সমাজগৃহে যীশু যে বাণী পাঠ করেছিলেন সে অংশটি লেখ। 

(খ) যীশুর মুক্তির বাণীর মমার্থ কী?

(গ) পক্ষাঘাত লোকটির সুস্থতা লাভের ঘটনাটি বর্ণনা কর।

(ঘ) মুক্তির পথে চলার পাঁচটি উপায় লেখ।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.